বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: গুলি চলল। ভোটদানে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠল। ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ থেকেও মুক্ত থাকা গেল না। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লাঠিচার্জও করতে হয়েছে বৃহস্পতিবার। পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোট গ্রহণও হিংসামুক্ত রইল না। যদিও সার্বিক ভাবে মোটামুটি নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটদানের হারও ছিল মোটের ওপর ভালোই। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এদিন ভোট পড়েছে ৭৯.০৯ শতাংশ। যেহেতু সন্ধে সাড়ে ছটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে, তাই ভোটদানের হারও আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন ৪৩টি আসনে ৩০৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা হয়। এই ৪৩টি আসনের মধ্যে উত্তর দিনাজপুরের ৯টি আসনে, নদিয়ার ৯টি আসনে, উত্তর ২৪ পরগনার ১৭টি আসনে, পূর্ব বর্ধমানের ৮টি আসনে ভোট হয়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নদিয়ায় ভোট পড়েছে ৮২.৬৭ শতাংশ, পূর্ব বর্ধমানে ভোট পড়েছে ৮২.১৫ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ভোট পড়েছে ৭৭.৭৬ শতাংশ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ভোট পড়েছে ৭৫.৯৪ শতাংশ। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলি নিয়ম মেনে প্রচার কাজ না চালানোয় নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, বাকি দুই দফার জন্য কোনও বড় জনসভা, রোড শো বা পদযাত্রা করতে পারবে না কোনও দলই। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভাও বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাঁরা এবার থেকে ভার্চুয়াল সভা করবেন। তবে এদিনের ভোট হিংসামুক্ত থাকেনি। এদিন ভোট চলাকালীন গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা বিধানসভার ৩৫ নম্বর বুথে। অভিযোগ ওঠার পরই নির্বাচন কমিশন রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। পরে বাগদায় রাজ্য পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা তারা স্বীকার করে নেয়। কমিশন জানিয়েছে, আত্মরক্ষার জন্য তিন রাউন্ড গুলি চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ। ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছেন। তবে একজনের বুলেটের আঘাত লেগেছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনারই অশোকনগরে সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল এবং বিজেপির কর্মীরা। তৃণমূলের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলা হয়। তাতে ২ জন তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করে তারা। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে গোলমাল হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের শাঁখারিপাড়ায়ও। রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ওই জায়গা। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী ছুটে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি চালায়। নদিয়ার বিজপুরের কাঁচরাপাড়ায় পলিটেকনিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসে বিজেপি কর্মীরা ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, তৃণমূল কর্মীদের মারধর করা হয় বলেও তারা অভিযোগ করেছে। যদিও বিজেপি পাল্টা অভিযোগ করেছে, তৃণমূল প্রথমে হামলা চালায়। তারই জবাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই বিজপুরেই এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ওই বিজেপি কর্মীর মাকেও মারধর করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে অভিযোগ ওঠে, তৃণমূলের সাতজন বুথ এজেন্ট নাকি নিখোঁজ। তাঁরা মেঘনা জুটমিলের ৯৬ থেকে ১০০ নম্বর বুথ–সহ সাতটি বুথের এজেন্ট। ঘটনার জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে তৃণমূল।
পূর্বস্থলী দক্ষিণের দোলগোবিন্দপুরে ৩৫ নম্বর বুথে ভোট শুরুর আগে থার্ড পোলিং এজেন্ট আচমকাই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন। তা নিয়ে আপত্তি তোলেন তৃণমূল কর্মীরা। অভিযোগ পাওয়ার পরই নির্বাচন কমিশন তাঁকে সরিয়ে দেয়। আউশগ্রামের প্রতাপপুরে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরূপ মিদ্দার বিরুদ্ধে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওয় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ইলেকশন দেখাচ্ছেন নাকি? শীতলকুচি করতে চাইছেন? খুব সাবধান। শুনুন, ধমকাবেন না, চমকাবেন না। তিনদিন পর আমার সরকার আসবে। আর আপনাকে আমাদের অধীনে কাজ করতে হবে।’ কৃষ্ণনগর উত্তরের কালীনগরে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও হামলার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ কমিশন খারিজ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তর বাংলারও অনেক জায়গায় গোলমালের খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের লহুজগ্রামের ২৪ নম্বর বুথে নিষেধ অমান্য করে জমায়েত হয় তৃণমূল কর্মীরা। তাদের ফিরে যেতে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু কথা না শোনায় তারা লাঠি চালায়। ঘটনায় কয়েকজন তৃণমূলকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, সুজাপুরের ২১৩ নম্বর বুথে বিজেপি কর্মীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তখন প্রতিবাদ করলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মারধরও করে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেতুগ্রামে বুথের বাইরে বিজেপি কর্মীদের ওপর বোমা–হামলার চালানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত তৃণমূল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা। এ ছাড়া, এখানকারই খাসপুরে বুথের মধ্যেই বিজেপি প্রার্থীকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে এসে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রার্থীকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় এক তৃণমূল কর্মীকে।
উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের কল্যাণনগরে বিজেপি এজেন্টকে মারধর করে তৃণমূল কর্মীরা। ওই এজেন্ট জানিয়েছেন, তাঁকে রড দিয়ে মারা হয়েছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তেরও অভিযোগ, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। দমদম উত্তরের ফতুল্লাপুরে ৭০ নম্বর বুথে বিজেপি এজেন্টকে বুথে বসতে বাধা দেয় তৃণমূল। পরে সেখানে ছুটে যান বিজেপি প্রার্থী অর্চনা মজুমদার। তিনি তাঁকে বুথে বসিয়ে দিয়ে আসেন। এ ছাড়া, একজন বিজেপি এজেন্টকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা অপহরণ করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। বনগাঁ পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১০৭ নম্বর বুথ এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, আমডাঙার রাহানা এক নম্বর এলাকায় বুধবার রাতভর বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। রাস্তায়ও বোমার সুতলি দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তর বাংলারও অনেক জায়গায় গোলমালের খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের লহুজগ্রামের ২৪ নম্বর বুথে নিষেধ অমান্য করে জমায়েত হয় তৃণমূল কর্মীরা। তাদের ফিরে যেতে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু কথা না শোনায় তারা লাঠি চালায়। ঘটনায় কয়েকজন তৃণমূলকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, সুজাপুরের ২১৩ নম্বর বুথে বিজেপি কর্মীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তখন প্রতিবাদ করলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মারধরও করে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। চোপড়ায়ও গোলমাল চলছেই। ভোটের আগে বুধবার রাত একটা নাগাদ এক বিজেপি কর্মীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অভিযুক্ত তৃণমূল–আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলে চোপড়া থানার পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী যায়। কিন্তু তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করে, কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে। যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ খারিজ করে দেয় তারা।
ভোট শেষ হওয়ার পরও চোপড়া থেকে হিংসার খবর পাওয়া গিয়েছে। ১৬১ নম্বর বুথে বিজেপির যে পোলিং এজেন্ট ছিলেন, তাঁর বাড়িতে ঢুকে গুলি চালায় কিছু দুষ্কৃতী। ঘটনায় ওই এজেন্টের পরিবারের ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই গুলি চালায়। প্রতিবাদে রাতেই চোপড়া থানা ঘেরাও করেন বিজেপি কর্মীরা। সমস্ত অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন :সব রেকর্ড ভেঙে ৩ লাখের বেশি সংক্রমণ ভারতে